শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান ‘সরকারি বধির হাই স্কুল’। বর্তমানে স্কুলটি বাংলাদেশ জাতীয় মূক ও বধির সংস্থার জায়গায় পরিচালিত হলেও তাদের জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়া হয় পুরান ঢাকার লালবাগের কামাল বাগ এলাকায়।
২০০৫ সালে রাষ্ট্রপতির পক্ষে ঢাকা জেলা প্রশাসন প্রতীকী মূল্যে ১০০ শতাংশ জমি স্কুলটির নামে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে দেয়। তবে ২০০৬ সাল থেকেই ওই স্কুলের জমিটি দখল করে রেখেছে পুরান ঢাকার সাবেক এই সংসদ সদস্য।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৬৩ সালে বধির সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। আর ১৯৬৬ সালে এ সংস্থার অধীনে নৈশকালীন স্কুল হিসেবে যাত্রা শুরু করে সরকারি বধির হাইস্কুল। পরে ১৯৮৪ সালে জুনিয়র হাইস্কুল। ১৯৯০ সালে হাইস্কুল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়।
২০১৬ সালে তা সরকারি স্কুল হিসেবে জাতীয়করণ হয় এবং ২০২০ সালে তা বাস্তবায়ন হয়। আর ২০০৫ সালে তৎকালীন সরকার রাষ্ট্রপতির পক্ষে বধির স্কুলের নামে পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকায় ১০০ শতাংশ জমি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে ঢাকা জেলা প্রশাসন। ২০২২ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জমিটি উদ্ধারে নির্দেশ দিলেও তা উদ্ধার হয়নি। এমনকি বর্তমান জায়গায় একটি ভবন নির্মাণের কথা বললেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
তবে লালবাগের কামাল বাগে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে বেড়িবাঁধের ওপরে বধির স্কুলের জমিটিতে পেট্রলপাম্প ও কারখানা করে তা দখলে রেখেছে ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম।
এ ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা দেশের একমাত্র ‘সরকারি বধির হাইস্কুলটিতে’ নেই কোন আবাসন ব্যবস্থা। বধির সংস্থার অধীনে থাকা ছাত্রাবাসে টাক খরচ করে থাকতে হয় তাদের। অতিরিক্ত খরচের কারণে অনেকে ভর্তি হতে চান না এখানে। হোস্টেলে থাকেন মাত্র ৮০ জন শিক্ষার্থী। আবাসন ব্যবস্থা থাকলে শিক্ষার্থী পেত বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর বিজয় নগরে থাকা স্কুলের টিনশেডটি বর্তমানে প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ২৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ছয়টি পুরাতন জরাজীর্ণ শ্রেণিকক্ষ ও একটি টয়লেট, মেয়েদের জন্য নেই আলাদা বাথরুমের ব্যবস্থা। আর শ্রেণি কক্ষের প্রায় প্রতিটি রুমের ফ্যান লাইটের সুইচবক্সগুলো খোলা অবস্থায় রয়েছে।
এমনকি ক্লাসরুমের দরজা-জানালাসহ উপরের চাল ভাঙাচোরা অবস্থায়। বর্ষাকালে টিনের ছিদ্র দিয়ে পড়ে বৃষ্টির পানি। বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীদের ছুটি দিতে হয়। বৃষ্টির পানি পড়ায় অধিকাংশ বেঞ্চ নষ্ট হওয়ার পর্যায়ে। পুরাতন, জরাজীর্ণ ভবনটি নিচু হওয়ায় ঝড় তোফানে কক্ষগুলো ধুলাবালিতে ঢেকে যায়।
এ ছাড়াও স্কুলের ২৫০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে মাত্র ১২ জন শিক্ষক রয়েছে। তাদের বসার জন্যও নেই আলাদা রুম বা কক্ষ। শিক্ষক সংকট রয়েছেন বলে জানায় স্কুল কর্তৃপক্ষ।
সরকারি বধির হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘স্কুলের নামে জমি রয়েছে, তবে তা সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিম প্রায় ২০ বছর ধরে দখল করে রেখেছে। অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দ্রুত সময়ে জমিটি উদ্ধার করে অবকাঠামোগত সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।এ বিষয়ে জানতে ঢাকা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর আহমেদকে কল দিলে তিনি তা ধরেননি।