বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এ দেশের মানুষকে ঠিক করতে হবে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বাংলাদেশটা আমাদের, এর ভবিষ্যৎও আমাদের নির্মাণ করতে হবে। আমেরিকা থেকে ট্রাম্প এসে ঠিক করে দেবেন না বা চীন থেকে শি এসেও এটা করে দেবেন না কিংবা ভারত থেকে মোদিও আমাদের ধাক্কা দিয়ে কিছু করতে পারবেন না। এ বিষয় আমাদের অন্তরে গেঁথে নিতে হবে।’
গতকাল শনিবার রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সেমিনার হলে ‘বাংলাদেশের ক্ষমতায়ন: নেতৃত্ব, ঐক্য এবং প্রবৃদ্ধির পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। গণতন্ত্রকে চাপিয়ে দেওয়া যায় না, ইট ক্যান নট বি ইম্পোজড। আপনি আমার ওপরে চাপিয়ে দেবেন, তা দেওয়া যাবে না। গণতন্ত্র চর্চা করতে হবে, সেই জায়গাগুলোকে খোলা রাখতে হবে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস আছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানাই, তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। আমাদের বিশ্বাস আছে যে, তিনি সফল হবেন। আসুন আমরা সবাই মিলে তাকে সাহায্য করে, আমরা নিজেরাই নিজেদের সাহায্য করে সামনের দিকে এগিয়ে যাই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এত যে রক্তপাত হলো, এত যে মায়ের বুক খালি হলো, তার পরিণতি কী হবে শেষ পর্যন্ত। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ভালো হবে এবং খুব ভালো হবে। কারণ, আমরা বাংলাদেশের মানুষ চিরকাল ভালোর জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছি, জয়ী হয়েছি। বিশেষ করে আমাদের তরুণরা, আমাদের ছেলেরা আজ বাংলাদেশের যা কিছু ভালো অর্জন সব তাদের জন্য। ৫২ থেকে ২৪ পর্যন্ত সব আন্দোলনে তরুণরা ভ্যানগার্ডের ভূমিকা পালন করেছেন। সেখানেই আমাদের শক্তি।’
দেশের প্রান্তিক মানুষের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাদের কথা কেউ বলেন না। আমাদের কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষ, বৈষম্য তো তাদের কাছে, পুরো বৈষম্য তো সেখানে। তাদের কথা বলা দরকার, তারা হেসেখেলে তাদের কাজ করছেন এবং বাংলাদেশকে টেনে তুলে ধরছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ আরোপ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখন খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছি, আমেরিকা ট্যারিফ আরোপ করে ফেলেছে এবং খুব দ্রুত যদি এই ট্যারিফের বিষয়ে সুরাহা না করা যায়, তাহলে আরও বড় বিপদে পড়তে হবে, এটা সত্য কথা। আমার মনে হয়, আমরা এই শ্রেণির (প্রান্তিক) মানুষগুলোকে যদি সামনের দিকে এগিয়ে আনতে পারি, তাদের কাজ দিতে পারি, তাদের বিভিন্ন প্রযুক্তি দিতে পারি, তাহলে এ সমস্যাগুলো দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারব।’
বাংলাদেশের অভ্যুদয় বহুচিন্তার একত্রিত ফল—জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্মটা হয়েছিল বহুত্ববাদের মধ্য দিয়ে। অনেকের মধ্যে এ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়। বহু চিন্তার মধ্য দিয়ে, অনেক চিন্তা এসে এখানে একসঙ্গে হয়েছে। স্বাধীনতার সময় আমাদের নেতা অনেকেই ছিলেন। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান, মাহবুব উল্লাহ তখন বড় নেতা ছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তখন আমাদের একেকজনের একেক চিন্তা ছিল। কেউ সমাজতন্ত্র, কেউ কমিউনিজম, কেউ ধর্ম প্রতিষ্ঠিত করার চিন্তা করেছেন। তারপর যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছে, আমরা সবাই এক হয়েছি এবং এক হয়ে লড়াই করেছি। আজ ২৪-এ একই ঘটনা ঘটেছে, বিভিন্ন চিন্তাভাবনা নিয়ে আমরা এসেছি, যেদিন ছাত্রদের ওপর গুলি শুরু হয়েছে, সবাই রাস্তায় নেমে এসেছেন।’
দুই পর্বের সেমিনারে প্রথম পর্বে সভাপতিত্ব করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান। এই পর্বে আলোচনা করেন পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর প্রমুখ। দ্বিতীয় পর্বে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা জামান প্রমুখ। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ফুয়াদ উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে এক ভিডিও বার্তা দেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।